হতে চাইলে ফ্রিল্যান্সার -১
দেশের কয়েক লাখ তরুণ ফ্রিল্যান্সিংয়ে জড়িত। তাঁদের সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই না বুঝে নেমে পড়ছেন এ পেশায়। কাজে নামার আগে কোন কাজগুলো বাংলাদেশিদের জন্য উপযুক্ত তা ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। ফ্রিল্যান্সিংয়ে অভিজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এমন কয়েকটি কাজ নিয়ে লিখেছেন বি এম মাহমুদ
কনটেন্ট রাইটিং
অনলাইনে আয় করার সহজ ও সম্ভাবনাময় উপায় হলো লেখালেখি, যেটিকে আর্টিকেল রাইটিং বা কনটেন্ট রাইটিং অথবা কনটেন্ট ডেভেলপিং বলা হয়। যাঁরা ইংরেজিতে ভালো তাঁরাই লেখালেখিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারেন। কনটেন্ট রাইটাররা বিভিন্ন কাজের জন্য কনটেন্ট লিখে থাকেন। ওয়েব কনটেন্ট ছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য রিসোর্স বই, ব্রশিওর, লিফলেট বা অন্যান্য প্রচারণার কাজে কনটেন্ট ডেভেলপ করা হয়ে থাকে। একজন কনটেন্ট ডেভেলপারের অনেক কাজের ক্ষেত্র রয়েছে। ক্ষেত্রগুলো হলো—কপিরাইটিং, ব্লগ লেখা, ওয়েব কনটেন্ট, সংবাদ বিজ্ঞপ্তি, ট্রান্সলেশন, অনুলিখন, সংক্ষেপকরণ, রিজিউম রাইটিং, পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা ইত্যাদি। লেখার বিষয়টা নির্ভর করে লেখকের দক্ষতা, রুচি, সর্বোপরি যে সাইট বা বিষয়ের জন্য লেখা হচ্ছে সেটার চাহিদার ওপর। তবে বিষয়বস্তু যা-ই হোক না কেন, একজন ওয়েব কনটেন্ট রাইটারকে কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করে ডেটাবেইস তৈরি করতে হয়। উন্নত বিশ্বে একজন কনটেন্ট রাইটারকে একজন সাংবাদিক আবার গবেষকও বলা হয়। বিষয়বস্তু অনুযায়ী ঠিক করে নিতে হয় লাইন অব অ্যাকশন। লেখা অবশ্যই প্রাঞ্জল হতে হবে। রাইটার হিসেবে মনে রাখতে হবে, যাঁরা ওয়েবসাইটে আপনার লেখা পড়বেন, তিনি মিনিটপ্রতি বা ঘণ্টাপ্রতি নির্দিষ্ট পয়সা খরচ করে পড়বেন। সুতরাং তিনি চাইবেন সবচেয়ে কম সময়ে প্রয়োজনীয় জিনিস পড়তে। তাই তথ্যনির্ভর, সংক্ষিপ্ত বিষয়ভিত্তিক লেখা লিখতে হবে। কনটেন্ট লেখার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই অন্যের লেখা কপি করা যাবে না। এসব মেনে চললে লেখক হিসেবে আপনার গ্রহণযোগ্যতা যেমন বাড়বে তেমনি উপার্জনের পথও প্রশস্ত হবে। কনটেন্ট রাইটার হতে গেলে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। ব্রিটিশ ও আমেরিকান ব্যাকরণ সম্পর্কে ধারণা থাকা ভালো। এ ছাড়া ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ, সমন্বয়, কাভার লেটার লেখা, আপডেটেড থাকা—এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশে এমন অনেক ফ্রিল্যান্স লেখক আছেন, যাঁরা ঘণ্টায় ১০ থেকে ৩০ ডলার আয় করে থাকেন। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি ইন্টারনেট মার্কেটিং অথবা কনটেন্ট মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানেও আপনি ৩০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা বেতনে চাকরি করতে পারেন। তাই কনটেন্ট রাইটার হিসেবেও ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।
ব্লগিং অ্যান্ড অ্যাফিলিয়েট
মার্কেটিং মার্কেটপ্লেসের কাজ না হলেও অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ার অন্যতম উপায় ব্লগিং ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। ব্লগিং ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং দুটিই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করা সম্ভব। ব্লগিংয়ের মাধ্যমে অনেক উপায়েই আয় করা যায়, তার মধ্যে আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় গুগল অ্যাডসেন্স। সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্টের এ বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রতি মাসে ১০ হাজার ডলারের ওপরে আয় করছেন, এমন ব্লগারের সংখ্যাও বাংলাদেশে কম নয়। নিজের ব্লগের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পণ্যকে সুপারিশ করেও (রেফার) আয় করার সুযোগ রয়েছে, যাঁকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলা হয়। ইন্টারনেট থেকে ভালো আয়ের ক্ষেত্রে এই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংও একটি উপযোগী মাধ্যম। তবে বিশাল এ ক্ষেত্রটিতে এগিয়ে যেতে আপনাকে কৌশলী হতে হবে, জানতে হবে পরীক্ষিত সব উপায়। এ ক্ষেত্রে ইংরেজিতে দক্ষ বা লেখালেখিতে আগ্রহীরা এগিয়ে আসতে পারেন।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
ইন্টারনেট বাণিজ্যের এই যুগে ওয়েবসাইট ছাড়া প্রতিষ্ঠানকে কল্পনাই করা যায় না! আবার ওয়েবসাইট থাকলেই কিন্তু এখন চলে না। এটি সর্বত্র পৌঁছে দিতে বিপণনও প্রয়োজন। একটি ওয়েবসাইটকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ উপায় সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। একটি ওয়েবসাইটকে গুগল সার্চের ফলাফলে প্রথম দিকে নিয়ে আসার যে কৌশল তাকেই মূলত সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বলা হয়। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতেও দিন দিন বাড়ছে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের কাজ। একজন দক্ষ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার মাসে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। প্রয়োজন কেবল সঠিক নির্দেশনা, প্রচেষ্টা, ধৈর্য এবং সময়। ফ্রিল্যান্সিং সাইট আপওয়ার্কের বিলিয়ন ডলারের এ মার্কেটপ্লেসের অনেকটাই এখন বাংলাদেশের দখলে। শুধু আপওয়ার্ক নয়, অন্যান্য মার্কেটপ্লেসেও সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)-এর কাজে বাংলাদেশিদের পদচারণ বাড়ছে। আপনি যদি ইংরেজি মোটামুটি জানেন, তবে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন শেখা শুরু করে দিতে পারেন। ইন্টারনেট থেকেই শিখতে পারেন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের খুঁটিনাটি। প্রয়োজনে নিতে পারেন প্রশিক্ষণ। দু-তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েই শুরু করা যায়। ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন চাহিদাসম্পন্ন এই কাজে।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ব্যক্তি—এখন সবারই চাই একটা ভার্চুয়াল ঠিকানা। কারণ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা যেমন সহজ, তেমনি খরচও কম। ওয়েব দুনিয়ায় এখন ৭০ কোটিরও বেশি ওয়েবসাইট আছে। এই বিপুলসংখ্যক ওয়েবসাইট তৈরির জন্য ডিজাইনের পাশাপাশি প্রয়োজন ওয়েব ডেভেলপমেন্টের। নতুন ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট কিংবা পুরনো ওয়েবসাইটকে নতুনভাবে ডেভেলপ করার জন্য প্রয়োজন ভালোমানের ডেভেলপার। এ কারণেই অনলাইন মার্কেটপ্লেসসহ লোকাল মার্কেটে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের চাহিদা বাড়ছে। মার্কেটপ্লেসগুলোতে তাই এখন সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন ও নির্ভরযোগ্য কাজ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট। ওডেস্কে প্রায় সব সময়ই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ক্যাটাগরিতে ১০ হাজারের বেশি জব থাকে। ইল্যান্সের প্রায় ৩৫ শতাংশ কাজই ওয়েব ডেভেলপমেন্টের। ওডেস্কে প্রতি ঘণ্টায় ১৫০ ডলারের বেশি রেটে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করছেন এখন অনেকেই। তবে এই আয়ের পরিমাণ নির্ভর করে ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে আপনি কতটা দক্ষ তার ওপর। একজন ভালো ওয়েব ডেভেলপার হতে হলে অবশ্যই এইচটিএমএল, সিএসএস, পিএইচপি, জাভাস্ক্রিপ্ট, জেকোয়ারি, মাইএসকিউএলসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ভালোভাবে জানতে হবে।
ওয়েব ও গ্রাফিকস ডিজাইন
 আঁকাজোকাতে ঝোঁক বেশি! সময় পেলেই কম্পিউটারের পেইন্ট টুলস, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর নিয়ে গাছ, পাখি, ফুল, ফল, বাড়ির দৃশ্য বা কারো নাম বা ছবি নিয়ে কাজ শুরু করেন? তাহলে নেমে পড়তে পারেন গ্রাফিকস ডিজাইনে। অন্য অনেক চাকরির তুলনায় পেশা হিসেবে গ্রাফিকস ডিজাইন নিরাপদ ও ঝামেলাবিহীন। নিজেকে ভালোভাবে তৈরি করতে পারলে গ্রাফিকস ডিজাইনারের কাজের অভাব নেই! প্রমোশনাল ডিসপ্লে, জার্নাল, করপোরেট রিপোর্টস, মার্কেটিং ব্রোশিওর, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, লোগো ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডিজাইনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের চাহিদা রয়েছে। ডিজাইনারদের বেতন নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ডিজাইনার স্যালারিজে’র মতে, বিশ্ববাজারে একজন ডিজাইনার বছরে এক লাখ মার্কিন ডলার আয় করতে পারেন। আর অনলাইন মার্কেটপ্লেসে একটি লোগো ডিজাইন করলে পাঁচ থেকে শুরু করে দুই হাজার ডলার পর্যন্ত পাওয়া যায়। এ ছাড়া একটি ওয়েবসাইটের প্রচ্ছদ ডিজাইন করে ৫০  থেকে শুরু করে তিন হাজার ডলার পর্যন্ত পেতে পারেন। ৯৯ ডিজাইনস ডটকম, ফ্রিল্যান্সার, ওডেস্কসহ অনেক অনলাইন মার্কেটপ্লেস রয়েছে, যেখানে এ কাজগুলো পাওয়া যায়। তাই ওয়েব ও গ্রাফিকস ডিজাইন হতে পারে একজন ফ্রিল্যান্সারের সবচেয়ে উপযোগী পেশা।
আঁকাজোকাতে ঝোঁক বেশি! সময় পেলেই কম্পিউটারের পেইন্ট টুলস, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর নিয়ে গাছ, পাখি, ফুল, ফল, বাড়ির দৃশ্য বা কারো নাম বা ছবি নিয়ে কাজ শুরু করেন? তাহলে নেমে পড়তে পারেন গ্রাফিকস ডিজাইনে। অন্য অনেক চাকরির তুলনায় পেশা হিসেবে গ্রাফিকস ডিজাইন নিরাপদ ও ঝামেলাবিহীন। নিজেকে ভালোভাবে তৈরি করতে পারলে গ্রাফিকস ডিজাইনারের কাজের অভাব নেই! প্রমোশনাল ডিসপ্লে, জার্নাল, করপোরেট রিপোর্টস, মার্কেটিং ব্রোশিওর, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, লোগো ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডিজাইনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের চাহিদা রয়েছে। ডিজাইনারদের বেতন নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ডিজাইনার স্যালারিজে’র মতে, বিশ্ববাজারে একজন ডিজাইনার বছরে এক লাখ মার্কিন ডলার আয় করতে পারেন। আর অনলাইন মার্কেটপ্লেসে একটি লোগো ডিজাইন করলে পাঁচ থেকে শুরু করে দুই হাজার ডলার পর্যন্ত পাওয়া যায়। এ ছাড়া একটি ওয়েবসাইটের প্রচ্ছদ ডিজাইন করে ৫০  থেকে শুরু করে তিন হাজার ডলার পর্যন্ত পেতে পারেন। ৯৯ ডিজাইনস ডটকম, ফ্রিল্যান্সার, ওডেস্কসহ অনেক অনলাইন মার্কেটপ্লেস রয়েছে, যেখানে এ কাজগুলো পাওয়া যায়। তাই ওয়েব ও গ্রাফিকস ডিজাইন হতে পারে একজন ফ্রিল্যান্সারের সবচেয়ে উপযোগী পেশা।  
 
 
 
 
 
 
