Header Ads

Header ADS

সিভি লেখার নিয়ম

চাকরি সন্ধানের ক্ষেত্রে অনেক আবেদনকারীই সাক্ষাৎকারের ডাক পান না। এমনও আছেন অনেকবার অনেক প্রতিষ্ঠানে সিভি জমা দিয়েছেন কিন্তু সাক্ষাৎকারের ডাক পাননি। অনেক কারণেই এমন ঘটতে পারে। আপনি যে ধরনের চাকরি চাইছেন, সিভি হয়তো তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অথবা সিভিতে আপনার তথ্যাদি উপস্থাপনে কোথাও ত্রুটি রয়ে গেছে কিংবা সিভিতে সব ধরনের তথ্যই উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও উপস্থাপন কৌশলে কোথাও হয়ত ভুল হয়েছে। আবার এমনও হতে পারে, আপনার যোগ্যতা প্রমাণে সবচেয়ে উপযুক্ত তথ্যটিই অন্য সব তথ্যের আড়ালে পড়ে গেছে এবং নিয়োগদাতার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। সিভিতে এমন অজস্র কৌশলগত দুর্বলতা থেকে যেতে পারে, যা কাম্য নয়।

সিভি দেখতে ক্ষুদ্র। এর পাঠক হয়তো মাত্র কয়েকজন, কিন্তু চাকরি সন্ধানীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে বেশির ভাগ চাকরিপ্রার্থী ব্যক্তিগত পরিচয়টাই সিভিতে উপস্থাপন করেন। অনেকেই মনে করেন, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক পরিচয় এবং কী কী শিক্ষাগত সনদ অর্জন করেছেন সিভিতে সেগুলো উপস্থাপন করাই যথেষ্ট। নিজের গুণ এবং দক্ষতা তারা উপস্থাপন করেন না বা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন না। অথচ আধুনিক নিয়োগকর্তারা প্রার্থীর প্রায়োগিক গুণ ও দক্ষতাকেই বেশি গুরুত্ব দেন। নিয়োগকর্তা জানতে চান প্রার্থীর যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও সাফল্য সম্পর্কে। সুতরাং বর্তমান সময়ের বায়োডাটা বা সিভিতে এর প্রতিটি বিষয়ই উপস্থাপন জরুরি।

বর্তমানে বায়োডাটা শব্দটির পরিবর্তে আরও দুটি শব্দ ব্যবহার করা হয়। একটি Resume, আরেকটি সিভি CV বা Curiculum Vitae। সিভির পরিবর্তে রেজুমে শব্দটি প্রয়োগ করা হলেও কারিকুলাম ভিটা কিন্তু প্রায়োগিক অর্থে রেজুমে বা সিভি নয়। যদিও সিভি এবং রেজুমে শব্দ দুটি একই উদ্দেশ্য সাধন করে, দুটোই নিয়োগকর্তার কাছে একজন আদর্শ প্রার্থীর যোগ্যতা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা তুলে ধরে। এদের পার্থক্য মূলত গঠন, বিবরণ, দৈর্ঘ্য এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে।

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উচিত নিজ নিজ সিভি তৈরি করতে শেখা। তৈরি করা সিভিতে প্রকারভেদ হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে সিভি তৈরির ফরমেট ৩টি :
১) ক্রনোলজিক্যাল,
২) ফাংশনাল এবং
৩) কম্বাইন্ড।

ক্রনোলজিক্যাল সিভি : ক্রনোলজিক্যাল ফরমেট সবচেয়ে প্রচলিত সিভি ফরমেট। চাকরির পদবি, চাকরির স্থান এবং চাকরির কার্যকালকে হেডিং হিসেবে এতে হাইলাইট করা হয়। ক্রনোলজিক্যাল ফরমেট তখনই উপযোগী হবে যখন আপনি একই ধরনের পেশায় বহুদিন কর্মরত ছিলেন। এবং আপনার কাজের ধারা হল ক্রমোন্নতি। এই ফরমেটে সর্বশেষ পেশাগত অবস্থান, প্রতিষ্ঠান, দায়িত্ব ও দায়িত্বকাল অভিজ্ঞতার অংশে প্রথমে চলে আসে। নিয়োগদাতারা এ ধরনের ক্রনোলজি পছন্দ করেন। কারণ তারা প্রার্থীর সর্বশেষ পেশাগত অবস্থা পলকেই জানতে পারেন এ ধরনের সিভি থেকে।

ফাংশনাল সিভি : এ ধরনের সিভিতে দক্ষতাভিত্তিক হেডিং ব্যবহৃত হয়। যে ক্ষেত্রে আপনি সর্বোত্তম দক্ষতা এবং সাফল্য দেখিয়েছেন তা আগে আসে। ফলে তা সময়ানুক্রমিক হয় না। এ ফরমেটে আপনার অর্জনগুলোর তালিকা থেকে আলাদা একটা সংক্ষিপ্ত অংশে কর্মধারাক্রম (work history) সতর্কভাবে উল্লেখ করতে হবে। ফাংশনাল ফরমেট তখনই উপযোগী হবে যখন আপনি কেরিয়ার পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন বা গ্যাপ দিয়ে পুনরায় জব মার্কেটে ঢুকতে যাচ্ছেন।

কম্বাইন্ড সিভি : ক্রনোলজিক্যাল এবং ফাংশনাল সিভির সমন্বিত রূপই হল কম্বাইন্ড সিভি। কম্বাইন্ড ফরমেটে সিভি দুভাবে তৈরি করা যায়। প্রথমে দক্ষতা ও সফলতার বিবরণ দিয়ে তারপর অভিজ্ঞতার ক্রনোলজিক্যাল বিবরণ দিতে পারেন। অথবা ক্রনোলজিক্যাল ফরমেটে অভিজ্ঞতা সাজিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কী কাজ করেছেন তা উল্লেখ করতে পারেন। কম্বাইন্ড ফরমেট উপযোগী হবে যখন আপনার অতীত পেশাগত ইতিহাস সমৃদ্ধ থাকবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ অভিজ্ঞতার ফলে আপনি ভালো দক্ষতা অর্জন করেছেন। এই দক্ষতাকেই আপনি কাঙ্খিত চাকরি পাওয়ার মূল চাবিকাঠি ভাবছেন।

সিভিতে কী কী থাকবে : সিভির প্রথমেই থাকবে হেডিং। এ অংশে আপনার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেইল এড্রেস, এমনকি ওয়েব এড্রেস থাকলে সেটিও উল্লেখ করুন। সিভির শুরুতে এ অংশটুকু পৃষ্ঠার ওপরের মধ্য অংশে বা ডান কোনায় লিখতে হবে। এরপর জব অবজেক্টিভ। কোন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনে আপনি সক্ষম এবং সিভির যাবতীয় তথ্য কোন দৃষ্টিকোণ থেকে পড়তে হবে সেটা জব অবজেক্টভ নিয়োগ দাতাকে বলে দেবে। সে কারণে জব অবজেক্টিভ হবে সংক্ষিপ্ত।

এরপর অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ অংশ। যে পেশা ও পদের নাম আপনি জব অবজেক্টিভ অংশে উল্লেখ করেছেন সে পেশার জন্য কেন আপনি আদর্শ প্রার্থী এখানে সে কথাই লেখা থাকবে। এটি আপনার যোগ্যতার সারসংক্ষেপ অংশ। এখানে আপনার অভিজ্ঞতা, পদবি, আপনার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন, বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা, পার্সনাল ভেল্যুজ, ওয়ার্ক এথিকস, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং যা আপনার কাঙ্খিত পেশার অনুকূলে বিবেচিত হয় লিখুন।

এরপর শিক্ষাগত যোগ্যতা। এ অংশটিকে Educational Qualification, Educational Historyশিরোনামেও দেওয়া যায়। অনেক সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার অংশটি সিভির শুরুতে Objective বা সামারি অংশের নিচেও উপস্থাপন করা হয়। এটা তখনই করবে যখন আপনি নতুন গ্রাজুয়েট। অথবা আপনার পেশা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণ বা ডিগ্রি থাকে। আবার অনেক সময় দরখাস্তের সঙ্গে একাডেমিক তথ্যাদিসহ সিভি চাওয়া হয়। তখনও আপনি এটি করতে পারেন।

সিভিতে ব্যক্তিগত কিছু তথ্যের পর সবশেষে আপনার সম্পর্কে ভালো বলবে এমন ৩ থেকে ৫ জন ব্যক্তির রেফারেন্স সংগ্রহ করে সিভিতে সংযুক্ত করুন। যার রেফারেন্স আপনি ব্যবহার করতে চাচ্ছেন আগে থেকেই তার কাছ থেকে অনুমতি নিন। তালিকায় প্রত্যেকের ক্রমিক নম্বর, নাম ও পদবি, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেইল অ্যাড্রেস লিখুন। তবে চাকরিদাতা যদি রেফারেন্স না চায় সে ক্ষেত্রে সিভিতে রেফারেন্স উল্লেখ না করাই ভালো।
সিভিতে অনাবশ্যক তথ্য : সিভিতে কী ধরনের তথ্য উল্লেখ করবেন সে ব্যাপারে সতর্ক হোন। অত্যন্ত ব্যক্তিগত তথ্যাদি দিয়ে সিভি অযথা ভারি করতে যাবেন না। এমন অনেক তথ্য আছে যা দরকারি চাকরি এবং কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে চাইলে উল্লেখ করার প্রয়োজন হতে পারে। একটি সঠিক, আধুনিক ও দৃষ্টি আকর্ষণকারী সিভি তৈরি করার ক্ষেত্রে যেসব তথ্য বাদ দেওয়া যেতে পারে :

সিভি বা সিভির ওপরে CV, Resume, Biodataএমন শব্দ, বেতন সংক্রান্ত তথ্য, পূর্বতন চাকরিদাতা বা প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ ঠিকানা, ব্যক্তিগত পরিসংখ্যান (বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় না হলে), বয়স জাতিগত পরিচয়, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ, ধর্মগত পরিচয়, শখ, বৈবাহিক অবস্থা, জন্মস্থান, উচ্চতা, ওজন, এবং স্বাস্থ্য। প্রয়োজনে এসব তথ্য প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎকারে জানিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

আরও কিছু বিষয় : সিভি লেখার সময় যে কোনো প্যারা বা অনুচ্ছেদে অনূর্ধ্ব ৬ লাইনের মধ্যে বক্তব্য সীমাবদ্ধ রাখাই হচ্ছে আদর্শ নিয়ম। এবার জেনে নিন সিভির বাহ্যিক কিছু বিষয়ে কী কী লক্ষ্য রাখতে হবে এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সে বিষয়ে। যেমন এমনভাবে সিভি তৈরি করবেন যাতে এর দৈর্ঘ্য ২ পৃষ্ঠার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। নতুন গ্রাজুয়েটদের ক্ষেত্রে সিভি ১ পৃষ্ঠার বেশি হওয়া উচিত নয়।

সিভি তৈরিতে স্ট্যান্ডার্ড এ-ফোর অথবা লেটার সাইজের অফসেট কাগজ ব্যবহার করতে হবে। সিভি এবং কভার লেটারের জন্য কেবল সাদা এবং আইভরি রংয়ের কাগজই গ্রহণযোগ্য। সিভি ফটোকপি মেশিনে কপি না করে কম্পিউটারের মাধ্যমে যাতে ভালো মানের অফসেট প্রিন্ট নেওয়া যায় সে দিকটা খেয়াল রাখুন। ফটোকপিতে লেখা অস্পষ্ট ও দৃষ্টিকটূ হতে পারে।

সামান্য ব্যাকরণ ও বানানগত ভুলের কারণে সিভি বাতিল হিসেবে গণ্য হতে পারে। মনে রাখতে হবে, সিভিতে সঠিক ব্যাকরণ ও বানানগত উপস্থাপন আপনার ভাষার দক্ষতা ও সচেতনতার প্রমাণ। সুতরাং সিভি লেখার পর চূড়ান্ত প্রিন্ট নেওয়ার আগে বেশ কয়েকবার প্রুফ দেখে নিন।

সিভি টাইপের ক্ষেত্রে সহজসাধ্য ফন্ট নির্বাচন করুন। শিরোনাম ও বুলেট পয়েন্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে এগুলো এমনভাবে ফরমেটিং করুন যাতে বোল্ড করা এবং বড় হাতের অক্ষর ব্যবহারের পরও সিভির প্রতি অংশের মাঝে সামঞ্জস্যপূর্ণ ফাঁকা স্থান থাকে। সর্বাধিক প্রাসঙ্গিক, গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য বা শব্দকে হাইলাইট করার জন্য Bold, Italic ফন্ট ব্যবহার করুন। টাইপিংয়ে সাধারণভাবে ১০ থেকে ১২ সাইজের ফন্ট ব্যবহার করুন। শিরোনাম টাইপ করার ক্ষেত্রে ১৪ থেকে ১৬ সাইজের ফন্ট ব্যবহার করুন।



চাকরি সন্ধানের ক্ষেত্রে অনেক আবেদনকারীই সাক্ষাৎকারের ডাক পান না। এমনও আছেন অনেকবার অনেক প্রতিষ্ঠানে সিভি জমা দিয়েছেন কিন্তু সাক্ষাৎকারের ডাক পাননি। অনেক কারণেই এমন ঘটতে পারে। আপনি যে ধরনের চাকরি চাইছেন, সিভি হয়তো তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অথবা সিভিতে আপনার তথ্যাদি উপস্থাপনে কোথাও ত্রুটি রয়ে গেছে কিংবা সিভিতে সব ধরনের তথ্যই উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও উপস্থাপন কৌশলে কোথাও হয়ত ভুল হয়েছে। আবার এমনও হতে পারে, আপনার যোগ্যতা প্রমাণে সবচেয়ে উপযুক্ত তথ্যটিই অন্য সব তথ্যের আড়ালে পড়ে গেছে এবং নিয়োগদাতার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। সিভিতে এমন অজস্র কৌশলগত দুর্বলতা থেকে যেতে পারে, যা কাম্য নয়।

সিভি দেখতে ক্ষুদ্র। এর পাঠক হয়তো মাত্র কয়েকজন, কিন্তু চাকরি সন্ধানীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে বেশির ভাগ চাকরিপ্রার্থী ব্যক্তিগত পরিচয়টাই সিভিতে উপস্থাপন করেন। অনেকেই মনে করেন, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক পরিচয় এবং কী কী শিক্ষাগত সনদ অর্জন করেছেন সিভিতে সেগুলো উপস্থাপন করাই যথেষ্ট। নিজের গুণ এবং দক্ষতা তারা উপস্থাপন করেন না বা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন না। অথচ আধুনিক নিয়োগকর্তারা প্রার্থীর প্রায়োগিক গুণ ও দক্ষতাকেই বেশি গুরুত্ব দেন। নিয়োগকর্তা জানতে চান প্রার্থীর যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও সাফল্য সম্পর্কে। সুতরাং বর্তমান সময়ের বায়োডাটা বা সিভিতে এর প্রতিটি বিষয়ই উপস্থাপন জরুরি।

বর্তমানে বায়োডাটা শব্দটির পরিবর্তে আরও দুটি শব্দ ব্যবহার করা হয়। একটি রেজুমে (Resume) আরেকটি সিভি (CV) অর্থাৎ কারিকুলাম ভিটা (Curiculum Vita)। সিভির পরিবর্তে রেজুমে শব্দটি প্রয়োগ করা হলেও কারিকুলাম ভিটা কিন্তু প্রায়োগিক অর্থে রেজুমে বা সিভি নয়। যদিও সিভি এবং রেজুমে শব্দ দুটি একই উদ্দেশ্য সাধন করে, দুটোই নিয়োগকর্তার কাছে একজন আদর্শ প্রার্থীর যোগ্যতা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা তুলে ধরে। এদের পার্থক্য মূলত গঠন, বিবরণ, দৈর্ঘ্য এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে।

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উচিত নিজ নিজ সিভি তৈরি করতে শেখা। তৈরি করা সিভিতে প্রকারভেদ হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে সিভি তৈরির ফরমেট ৩টি :
১) ক্রনোলজিক্যাল,
২) ফাংশনাল এবং
৩) কম্বাইন্ড।

ক্রনোলজিক্যাল সিভি : ক্রনোলজিক্যাল ফরমেট সবচেয়ে প্রচলিত সিভি ফরমেট। চাকরির পদবি, চাকরির স্থান এবং চাকরির কার্যকালকে হেডিং হিসেবে এতে হাইলাইট করা হয়। ক্রনোলজিক্যাল ফরমেট তখনই উপযোগী হবে যখন আপনি একই ধরনের পেশায় বহুদিন কর্মরত ছিলেন। এবং আপনার কাজের ধারা হল ক্রমোন্নতি। এই ফরমেটে সর্বশেষ পেশাগত অবস্থান, প্রতিষ্ঠান, দায়িত্ব ও দায়িত্বকাল অভিজ্ঞতার অংশে প্রথমে চলে আসে। নিয়োগদাতারা এ ধরনের ক্রনোলজি পছন্দ করেন। কারণ তারা প্রার্থীর সর্বশেষ পেশাগত অবস্থা পলকেই জানতে পারেন এ ধরনের সিভি থেকে।

ফাংশনাল সিভি : এ ধরনের সিভিতে দক্ষতাভিত্তিক হেডিং ব্যবহৃত হয়। যে ক্ষেত্রে আপনি সর্বোত্তম দক্ষতা এবং সাফল্য দেখিয়েছেন তা আগে আসে। ফলে তা সময়ানুক্রমিক হয় না। এ ফরমেটে আপনার অর্জনগুলোর তালিকা থেকে আলাদা একটা সংক্ষিপ্ত অংশে কর্মধারাক্রম (work history) সতর্কভাবে উল্লেখ করতে হবে। ফাংশনাল ফরমেট তখনই উপযোগী হবে যখন আপনি কেরিয়ার পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন বা গ্যাপ দিয়ে পুনরায় জব মার্কেটে ঢুকতে যাচ্ছেন।

কম্বাইন্ড সিভি : ক্রনোলজিক্যাল এবং ফাংশনাল সিভির সমন্বিত রূপই হল কম্বাইন্ড সিভি। কম্বাইন্ড ফরমেটে সিভি দুভাবে তৈরি করা যায়। প্রথমে দক্ষতা ও সফলতার বিবরণ দিয়ে তারপর অভিজ্ঞতার ক্রনোলজিক্যাল বিবরণ দিতে পারেন। অথবা ক্রনোলজিক্যাল ফরমেটে অভিজ্ঞতা সাজিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কী কাজ করেছেন তা উল্লেখ করতে পারেন। কম্বাইন্ড ফরমেট উপযোগী হবে যখন আপনার অতীত পেশাগত ইতিহাস সমৃদ্ধ থাকবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ অভিজ্ঞতার ফলে আপনি ভালো দক্ষতা অর্জন করেছেন। এই দক্ষতাকেই আপনি কাঙ্খিত চাকরি পাওয়ার মূল চাবিকাঠি ভাবছেন।

সিভিতে কী কী থাকবে : সিভির প্রথমেই থাকবে হেডিং। এ অংশে আপনার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেইল এড্রেস, এমনকি ওয়েব এড্রেস থাকলে সেটিও উল্লেখ করুন। সিভির শুরুতে এ অংশটুকু পৃষ্ঠার ওপরের মধ্য অংশে বা ডান কোনায় লিখতে হবে। এরপর জব অবজেক্টিভ। কোন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনে আপনি সক্ষম এবং সিভির যাবতীয় তথ্য কোন দৃষ্টিকোণ থেকে পড়তে হবে সেটা জব অবজেক্টভ নিয়োগ দাতাকে বলে দেবে। সে কারণে জব অবজেক্টিভ হবে সংক্ষিপ্ত।

এরপর অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ অংশ। যে পেশা ও পদের নাম আপনি জব অবজেক্টিভ অংশে উল্লেখ করেছেন সে পেশার জন্য কেন আপনি আদর্শ প্রার্থী এখানে সে কথাই লেখা থাকবে। এটি আপনার যোগ্যতার সারসংক্ষেপ অংশ। এখানে আপনার অভিজ্ঞতা, পদবি, আপনার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন, বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা, পার্সনাল ভেল্যুজ, ওয়ার্ক এথিকস, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং যা আপনার কাঙ্খিত পেশার অনুকূলে বিবেচিত হয় লিখুন।

এরপর শিক্ষাগত যোগ্যতা। এ অংশটিকে Educational Qualification, Educational Historyশিরোনামেও দেওয়া যায়। অনেক সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার অংশটি সিভির শুরুতে Objective বা সামারি অংশের নিচেও উপস্থাপন করা হয়। এটা তখনই করবে যখন আপনি নতুন গ্রাজুয়েট। অথবা আপনার পেশা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণ বা ডিগ্রি থাকে। আবার অনেক সময় দরখাস্তের সঙ্গে একাডেমিক তথ্যাদিসহ সিভি চাওয়া হয়। তখনও আপনি এটি করতে পারেন।

সিভিতে ব্যক্তিগত কিছু তথ্যের পর সবশেষে আপনার সম্পর্কে ভালো বলবে এমন ৩ থেকে ৫ জন ব্যক্তির রেফারেন্স সংগ্রহ করে সিভিতে সংযুক্ত করুন। যার রেফারেন্স আপনি ব্যবহার করতে চাচ্ছেন আগে থেকেই তার কাছ থেকে অনুমতি নিন। তালিকায় প্রত্যেকের ক্রমিক নম্বর, নাম ও পদবি, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেইল অ্যাড্রেস লিখুন। তবে চাকরিদাতা যদি রেফারেন্স না চায় সে ক্ষেত্রে সিভিতে রেফারেন্স উল্লেখ না করাই ভালো।
সিভিতে অনাবশ্যক তথ্য : সিভিতে কী ধরনের তথ্য উল্লেখ করবেন সে ব্যাপারে সতর্ক হোন। অত্যন্ত ব্যক্তিগত তথ্যাদি দিয়ে সিভি অযথা ভারি করতে যাবেন না। এমন অনেক তথ্য আছে যা দরকারি চাকরি এবং কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে চাইলে উল্লেখ করার প্রয়োজন হতে পারে। একটি সঠিক, আধুনিক ও দৃষ্টি আকর্ষণকারী সিভি তৈরি করার ক্ষেত্রে যেসব তথ্য বাদ দেওয়া যেতে পারে :

সিভি বা সিভির ওপরে CV, Resume, Biodataএমন শব্দ, বেতন সংক্রান্ত তথ্য, পূর্বতন চাকরিদাতা বা প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ ঠিকানা, ব্যক্তিগত পরিসংখ্যান (বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় না হলে), বয়স জাতিগত পরিচয়, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ, ধর্মগত পরিচয়, শখ, বৈবাহিক অবস্থা, জন্মস্থান, উচ্চতা, ওজন, এবং স্বাস্থ্য। প্রয়োজনে এসব তথ্য প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎকারে জানিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

আরও কিছু বিষয় : সিভি লেখার সময় যে কোনো প্যারা বা অনুচ্ছেদে অনূর্ধ্ব ৬ লাইনের মধ্যে বক্তব্য সীমাবদ্ধ রাখাই হচ্ছে আদর্শ নিয়ম। এবার জেনে নিন সিভির বাহ্যিক কিছু বিষয়ে কী কী লক্ষ্য রাখতে হবে এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সে বিষয়ে। যেমন এমনভাবে সিভি তৈরি করবেন যাতে এর দৈর্ঘ্য ২ পৃষ্ঠার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। নতুন গ্রাজুয়েটদের ক্ষেত্রে সিভি ১ পৃষ্ঠার বেশি হওয়া উচিত নয়।

সিভি তৈরিতে স্ট্যান্ডার্ড এ-ফোর অথবা লেটার সাইজের অফসেট কাগজ ব্যবহার করতে হবে। সিভি এবং কভার লেটারের জন্য কেবল সাদা এবং আইভরি রংয়ের কাগজই গ্রহণযোগ্য। সিভি ফটোকপি মেশিনে কপি না করে কম্পিউটারের মাধ্যমে যাতে ভালো মানের অফসেট প্রিন্ট নেওয়া যায় সে দিকটা খেয়াল রাখুন। ফটোকপিতে লেখা অস্পষ্ট ও দৃষ্টিকটূ হতে পারে।

সামান্য ব্যাকরণ ও বানানগত ভুলের কারণে সিভি বাতিল হিসেবে গণ্য হতে পারে। মনে রাখতে হবে, সিভিতে সঠিক ব্যাকরণ ও বানানগত উপস্থাপন আপনার ভাষার দক্ষতা ও সচেতনতার প্রমাণ। সুতরাং সিভি লেখার পর চূড়ান্ত প্রিন্ট নেওয়ার আগে বেশ কয়েকবার প্রুফ দেখে নিন।

সিভি টাইপের ক্ষেত্রে সহজসাধ্য ফন্ট নির্বাচন করুন। শিরোনাম ও বুলেট পয়েন্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে এগুলো এমনভাবে ফরমেটিং করুন যাতে বোল্ড করা এবং বড় হাতের অক্ষর ব্যবহারের পরও সিভির প্রতি অংশের মাঝে সামঞ্জস্যপূর্ণ ফাঁকা স্থান থাকে। সর্বাধিক প্রাসঙ্গিক, গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য বা শব্দকে হাইলাইট করার জন্য Bold, Italic ফন্ট ব্যবহার করুন। টাইপিংয়ে সাধারণভাবে ১০ থেকে ১২ সাইজের ফন্ট ব্যবহার করুন। শিরোনাম টাইপ করার ক্ষেত্রে ১৪ থেকে ১৬ সাইজের ফন্ট ব্যবহার করুন।
Powered by Blogger.