বিশ্বের ২০ সমৃদ্ধ দেশের একটি হবে বাংলাদেশ
আহ মমুস্তফা কামাল।।
বাংলাদেশ আজবিশ্বে ‘উন্নয়নেররোল মডেল’ হিসেবে পরিচিতিলাভ করেছে।স্বাধীনতার পরথেকে আওয়ামীলীগ সরকারযতবারই ক্ষমতায়এসেছে, ততবারইবিশ্বশান্তি ওনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, গণতন্ত্র ওসুশাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার সুরক্ষা, সন্ত্রাস ওজঙ্গিবাদ দমন, নারীর ক্ষমতায়নও নারীঅধিকার প্রতিষ্ঠাসহআর্থ-সামাজিকক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নয়নঅর্জনে সক্ষমহয়েছে। গতসাত বছরেসারা বিশ্বেগড়ে জিডিপিতে৬ শতাংশেরওপরে প্রবৃদ্ধিঅর্জন করেছেমাত্র ১৭টিদেশ। তারমধ্যে বাংলাদেশঅন্যতম। বর্তমানেজিডিপিতে প্রবৃদ্ধি৭-এরঘরে উন্নীতহয়েছে। বর্তমানসরকার দায়িত্বভারগ্রহণের সময়জাতীয় গ্রিডেবিদ্যুৎ সঞ্চালিতহয়েছিল ৩হাজার ২৬০মেগাওয়াট। সেসময় বিদ্যুৎউৎপাদন ক্ষমতাছিল ৪হাজার ৯০০মেগাওয়াট। আজকেবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ১৪হাজার ৯০০মেগাওয়াট। দেশের৭৮ ভাগমানুষ বিদ্যুৎসুবিধা পাচ্ছে।বাংলাদেশ প্রতিদিনেরহয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীআ হম মুস্তফাকামালের এইসাক্ষাৎকারটি নিয়েছেনগোলাম রাব্বানী
বাংলাদেশ প্রতিদিন: বিগত বছরগুলোতেঅর্থনীতির ক্ষেত্রেআপনাদের সফলতারবিশেষ বিশেষএলাকাসমূহ সম্পর্কেযদি আমাদেরএকটু ধারণাদেন?
মুস্তফা কামাল: আওয়ামী লীগসরকারের অব্যাহতপ্রচেষ্টার ফলেবাংলাদেশ আজবিশ্বে ‘উন্নয়নেররোল মডেল’ হিসেবে পরিচিতিলাভ করেছে।স্বাধীনতার পরথেকে আওয়ামীলীগ সরকারযতবারই ক্ষমতায়এসেছে, ততবারইবিশ্ব শান্তিও নিরাপত্তানিশ্চিতকরণ, গণতন্ত্রও সুশাসনপ্রতিষ্ঠা, মানবাধিকারসুরক্ষা, সন্ত্রাসও জঙ্গিবাদদমন, নারীরক্ষমতায়ন ওনারী অধিকারপ্রতিষ্ঠাসহ আর্থ-সামাজিকক্ষেত্রে দৃশ্যমানউন্নয়ন অর্জনেসক্ষম হয়েছে।বর্তমান সরকারদক্ষতার সঙ্গেপ্রদত্ত প্রতিশ্রুতিবাস্তবায়নে যেসাফল্যের স্বাক্ষররেখেছে তাদেশের প্রতিটিক্ষেত্রেই এখনদৃশ্যমান। গতসাত বছরেসারা বিশ্বেগড়ে জিডিপিতেছয় শতাংশেরওপরে প্রবৃদ্ধিঅর্জন করেছেমাত্র ১৭টিদেশ। তারমধ্যে বাংলাদেশঅন্যতম। সারাবিশ্বে ২০০৮সালের সৃষ্টঅর্থনৈতিক মহামন্দামোকাবিলা করেআমাদের এইঅর্জন সারাবিশ্বের দৃষ্টিকেড়েছে। এখানেউল্লেখ্য, ইতিপূর্বেস্বাধীনতার পরথেকে ২০০৯সাল পর্যন্তআমাদের বার্ষিকগড় প্রবৃদ্ধিকখনো ৫ভাগের ওপরেযায়নি। এখনশুধু ৬ভাগ নয়, ৬-এরবৃত্ত ভেঙেগত অর্থবছর(২০১৫-১৬) জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি৭-এরঘরে উন্নীতহয়েছে, যাছিল ৭.১ভাগ। চলতিবছর আমাদেরজিডিপিতে প্রবৃদ্ধিরলক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে৭.২ভাগ। পরবর্তীবছরগুলোতে প্রবৃদ্ধিরলক্ষ্যমাত্রা গড়ে৭.৪ভাগ। ২০২০সালে আমাদেরসপ্তম পঞ্চবার্ষিকপরিকল্পনার শেষবছরে প্রবৃদ্ধিরহার দাঁড়াবেশতকরা ৮ভাগ। এরপর২০৩০ পর্যন্তজিডিপিতে বার্ষিকগড় প্রবৃদ্ধি৮.৫ভাগ হারেঅর্জন করবেবলে আমরাআশা করছি।
বাংলাদেশ প্রতিদিন: ২০০৯-এরনির্বাচনের প্রাক্কালেআপনাদের সরকারযে রূপকল্প-২০২১, যাকে আপনারাবলে থাকেনদিনবদলের সনদ, সেখানে যেসব লক্ষ্যমাত্রানির্ধারণ করাহয়েছিল, তারমাঝে মৌলিকএলাকাগুলোতে আপনাদেরসক্ষমতা সম্পর্কেআমরা জানতেচাই।
মুস্তফা কামাল: বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীনমহাজোট সরকার২০০৯ সালেযখন ক্ষমতাগ্রহণ করেতখন সারাবিশ্ব ছিলঅর্থনৈতিকভাবে মহামন্দায়আক্রান্ত। আমাদেরদেশের অর্থনীতিওছিল মন্দাকবলিত।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনারনেতৃত্বে আমাদেরসরকার রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বগ্রহণের পরপরইসুচিন্তিত অর্থনৈতিককৌশল অবলম্বনকরে। এধারাবাহিকতায় প্রণীতহয় একটিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনাও ষষ্ঠপঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা।এ দুটিপরিকল্পনার হাতধরে এগোতেথাকে বাংলাদেশ।
জাতির প্রয়োজনেরসঙ্গে সংগতিপূর্ণসুষ্ঠু মুদ্রানীতিও রাজস্বনীতি অনুসরণকরে মূল্যস্ফীতিনিয়ন্ত্রণে রেখেও টাকারমুদ্রামান স্থিতিশীলরেখে দেশেরজনগণের মৌলিকচাহিদাগুলো মেটাতেসরকার সক্রিয়ভূমিকা গ্রহণকরে। প্রথমেযে লক্ষ্যটিসরকারের সামনেচলে আসেসেটি হচ্ছেদারিদ্র্যসীমাকে নিয়ন্ত্রণেনিয়ে আসা।আমরা পৃথিবীরসব দেশেরআগে সহস্রাব্দউন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাঅর্জনে সক্ষমহয়েছি। যারজন্য আমরাসারা বিশ্বেপ্রশংসিত হয়েছি।
দিনবদলের সনদেআমরা যাযা বলেছিলামএবং এরবিপরীতে আমরাযা যাঅর্জন করেছিতা একটিবিরাট ক্যানভাস।আমি জানিসে বিষয়টিব্যাখ্যার সুযোগএখানে নেই।তাই ছোট্টপরিসরে অর্থনীতিরমৌলিক এলাকাগুলোতেআমাদের অগ্রগতিআপনাদের মাধ্যমেজাতির সামনেতুলে ধরতেচাই :
(ক) ২০২১ সালেরমধ্যে সবারজন্য প্রাইমারিশিক্ষা নিশ্চিতকরা, শতভাগছেলেমেয়েকে স্কুলেপাঠানো- এলক্ষ্যটি ইতিমধ্যেদারুণভাবে সফলহয়েছে। এখনআমাদের শতকরা৯৯ জনছেলেমেয়ে নিয়মিতস্কুলে যাচ্ছে।
(খ) সনদে বলাহয়েছিল ২০২১সালের মধ্যেপ্রত্যেক ঘরেঘরে বিদ্যুৎপৌঁছে দেওয়াহবে। ২০০৯সালে বর্তমানসরকার দায়িত্বভারগ্রহণের সময়জাতীয় গ্রিডেবিদ্যুৎ সঞ্চালিতহয়েছিল ৩হাজার ২৬০মেগাওয়াট। সেসময় বিদ্যুৎউৎপাদন ক্ষমতাছিল ৪হাজার ৯০০মেগাওয়াট। আজকেবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ১৪হাজার ৯০০মেগাওয়াট। জাতীয়গ্রিডে এখন৮ হাজারমেগাওয়াট বিদ্যুৎসঞ্চালিত হয়।এখন দেশের৭৮ ভাগমানুষ বিদ্যুৎসুবিধা পাচ্ছে।ইনশাল্লাহ ২০২১সালের মধ্যেসবার জন্যবিদ্যুৎ সুবিধানিশ্চিত হবে।
(গ) সরকার প্রতিশ্রুতিদিয়েছিল ‘ডিজিটালবাংলাদেশ’ গড়ার, যা আজবাস্তবে রূপান্তরিতহয়েছে। আজদেশের প্রতিটিইউনিয়নে ডিজিটালতথ্য সেবাকেন্দ্রস্থাপিত হয়েছে।সবাই ঘরেবসে আউটসোর্সিংয়ের কাজকরে জীবিকানির্বাহের সুযোগপাচ্ছে। এতথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমেগ্রামীণ জনপদেরমানুষ খুবসহজেই সরকারিফরম, ই-জিপিপাসপোর্ট-ভিসাসংক্রান্ত তথ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন, চাকরিরখবর, নাগরিকত্বসনদ, পাবলিকপরীক্ষার ফলাফলসহঅন্যান্য সরকারিসেবা পাচ্ছেন।বর্তমানে মোবাইলগ্রাহকের সংখ্যাপ্রায় ১২কোটি ২৬লাখ, যা২০০৮-০৯সালে ছিল৫ কোটি২৪ লাখ।বর্তমানে ইন্টারনেটব্যবহারকারীর সংখ্যা৫ কোটি৩৪ লাখ।বছরভিত্তিক টেলিঘনত্ব২০০৯ সালেছিল ৩১.৯৫%, যা বর্তমানেপ্রায় ৭৯.৩০%।
(ঘ) দেশে দারিদ্র্যসীমাকমিয়ে আনারপ্রতিশ্রুতি ছিলসেই রূপকল্পে।আপনারা এরমধ্যে অবগতহয়েছেন যে, ২০০৫ সালেযেখানে হতদরিদ্রেরসংখ্যা ছিল২৫ ভাগসেখানে বর্তমানেতা অর্ধেকেনেমে এসেছেআজ তা১২.৯ভাগ। এখানেউল্লেখ্য, সারাবিশ্বে দারিদ্র্যসীমাও১২ ভাগেরকাছাকাছি। সেইনিরিখে আমরাবিশ্বের সঙ্গেসমান্তরাল অবস্থানেঅবস্থান করছি।
(ঙ) রূপকল্প ২০২১-এবলা হয়েছিল, ২০২১ সালেবাংলাদেশকে মধ্যমআয়ের দেশেপরিণত করাহবে। এরইমাঝে আপনারাজেনেছেন যে, ২০১৫ সালেরজুলাই মাসেরআগে পৃথিবীরঅর্থনীতির মাপকাঠিতেবাংলাদেশ ছিলএবটি হতদরিদ্রদেশ। ২০১৫সালের জুলাইথেকে বাংলাদেশএখন বিশ্বব্যাংকেরহিসাব অনুযায়ীনিম্নমধ্যম আয়েরদেশে উন্নীতহয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন: আপনাদের সরকারেরসময় আর্থ-সামাজিকক্ষেত্রে সফলতাএবং এসবেরঅর্জনের পেছনেমূল ভূমিকাকাদের ছিলবলে আপনিমনে করেন?
মুস্তফা কামাল: ধারাবাহিকভাবে গতসাত বছরআমাদের উন্নয়নসারা বিশ্বেপ্রশংসিত হয়েছে।আমি মনেকরি এইঅর্জনের পেছনেমূল চালিকাশক্তিহচ্ছে এদেশেরমানুষ : এদেশের কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, পোশাককর্মী, শিক্ষক, সুশীলসমাজ, প্রচারমাধ্যম এবংআমাদের বেসরকারিখাত। সবারসক্রিয় অংশগ্রহণেএটি অর্জিতহয়েছে। এঅর্জন গর্বকরার মতো।কয়েকটি তথ্যউপস্থাপন করলেএ বিষয়টিআরও পরিষ্কারহবে :
* সাতবছর আগেবর্তমান সরকারেরযাত্রা শুরুরসময় মূল্যস্ফীতিছিল শতকরা৯ ভাগেরমতো। এখনযা সাড়ে৫ ভাগেরকাছাকাছি।
* বাংলাদেশেরমানুষের মাথাপিছুআয় বেড়ে১ হাজার৪৬৬ ডলারেদাঁড়িয়েছে যা২০০৬-০৭সালে ছিল৫৯৮ ডলার।
* বর্তমানসরকার রপ্তানিবাণিজ্য শুরুকরেছিল ১৪বিলিয়ন ডলারদিয়ে। গতবছর রপ্তানিরপরিমাণ দাঁড়ায়৩৪ বিলিয়নডলার যাআড়াই গুণেরমতো।
* ২০০৯সালে বার্ষিকউন্নয়ন কর্মসূচিরআকার ছিল২২ হাজারকোটি টাকাআর ২০১৬-১৭অর্থবছরে এরআকার দাঁড়ায়১ লাখ২৩ হাজারকোটি টাকা।
* গতসাত বছরেআমাদের রাজস্বখাতে প্রবৃদ্ধিশতকরা ১৫ভাগের মতো।
২০০৮-০৯অর্থবছরে বার্ষিকরাজস্ব আয়ছিল ৬৯হাজার কোটিটাকা। ২০১৫-১৬অর্থবছরে রাজস্বআয় হয়েছে১ লাখ৭৭ হাজার৪০০ কোটিটাকা।
* আমাদেরবৈদেশিক মুদ্রাররিজার্ভ ২০০৬-০৭অর্থবছরে ছিল৫.১বিলিয়ন মার্কিনডলার, বর্তমানেতা ৩১বিলিয়ন মার্কিনডলারের ওপর।
* সাতবছর আগেপ্রবাসী আয়ছিল ৮বিলিয়ন ডলারেরমতো। এখনযা ১৫বিলিয়ন ডলার।
* গতসাত বছরেআমাদের কারেন্টঅ্যাকাউন্ট সববছরেই ছিলPositive Trajectory তে।
* টাকারমান ছিলস্থিতিশীল।
* ২০১৫-এরতুলনায় ২০১৬-তেবিদেশি বিনিয়োগবৃদ্ধি পেয়েছেশতকরা ৪৪ভাগ।
* ২০০৬সালে বাংলাদেশেরমানুষের প্রত্যাশিতগড় আয়ুষ্কালছিল ৬৬.৫বছর যা২০১৪-১৫অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে৭০.৯বছর।
বাংলাদেশ প্রতিদিন: বাংলাদেশের দারিদ্র্যবিমোচন ক্ষেত্রেঅর্জিত সাফল্যেরপেছনে অন্তর্নিহিতশক্তিগুলো কীবলে আপনিমনে করেন?
মুস্তফা কামাল: দারিদ্র্য বিমোচনহচ্ছে আর্থ-সামাজিকঅগ্রগতির গুরুত্বপূর্ণনির্দেশক। সম্পদপরিস্থিতির সীমাবদ্ধতায়দরিদ্র মোকাবিলাসব সময়সরকারের অন্যতমপ্রধান চ্যালেঞ্জ।
* দারিদ্র্যবিমোচন বাংলাদেশেরউল্লেখযোগ্য একটিঅগ্রগতি। এরপেছনে সরকারেরউচ্চমাত্রায় ধারাবাহিকভাবেঅর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তাকর্মসূচি, বেসরকারিপর্যায়ে ক্ষুদ্রও মাঝারিশিল্পে বিনিয়োগএবং একইসঙ্গে সামাজিকউদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণভূমিকা রয়েছে।
* বাংলাদেশেদারিদ্র্য বিমোচনকার্যক্রম সফলতারপেছনে যেমূল শক্তিটিনিয়ামক শক্তিহিসেবে কাজকরেছে সেটিহলো মাননীয়প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার দৃঢ়তা, দেশের মানুষেরপ্রতি মমত্ববোধএবং একজনসুদক্ষ রাজনীতিবিদহিসেবে তারভূমিকা। বাংলাদেশেসরকারের গৃহীতপ্রতিটি উন্নয়নপরিকল্পনায় গণমানুষকেসম্পৃক্ত করেকর্মসূচি বাস্তবায়নেরউদ্যোগ গ্রহণকরা হয়েছে।পরিকল্পনার লক্ষ্যযেমন ছিলমানুষকে উন্নতজীবনের সুযোগকরে দেওয়াতেমনিভাবে প্রতিটিলক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নেরক্ষেত্রে মানুষকেইঅন্তর্ভুক্ত করেকার্যক্রম চালানোহয়েছে। এতেকরে প্রতিটিকর্মসূচির সঙ্গেদেশের মানুষস্ব-উদ্যোগেইএকাত্মতা প্রকাশকরেছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন: চীনের প্রেসিডেন্টএবং বিশ্বব্যাংকেরপ্রেসিডেন্টের সাম্প্র্রতিকসফরকে আপনিকীভাবে দেখছেন?
মুস্তফা কামাল: চীন এবংবিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টেরবাংলাদেশে সাম্প্রতিকসফর দুটিহচ্ছে বর্তমানসরকারের সফলঅর্থনৈতিক কূটনীতিরবহিঃপ্রকাশ। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশএখন উন্নয়নেররোল মডেলহিসেবে বিবেচিত।বিগত সাতবছরে গড়ে৬ ভাগেরওপর স্থিতিশীলজিডিপি প্রবৃদ্ধিঅর্জনকারী সতেরটিদেশের অন্যতমদেশ হচ্ছেবাংলাদেশ। দারিদ্র্যনিরসন ওনারীর ক্ষমতায়নেবাংলাদেশের অর্জনবিশ্বব্যাপী প্রশংসালাভ করেছে।জাতিসংঘের মহাসচিবথেকে শুরুকরে বিশ্বনেতৃবৃন্দ বাংলাদেশকেসাধুবাদ জানিয়েছে।গত সাতবছরে আমাদেরমাননীয় প্রধানমন্ত্রীএসব বিষয়েদেশের সাফল্যেআটবার আন্তর্জাতিকপরিমণ্ডল থেকেপুরস্কৃত হয়েছেন।তাই সঙ্গতকারণেই আমাদেরধারাবাহিক প্রবৃদ্ধিঅর্জন, রাজনীতিতেস্থিতিশীলতা, অবকাঠামোখাতসহ অর্থনীতিরসব ক্ষেত্রেঅসাধারণ সফলতারকারণে বাংলাদেশেরউন্নয়ন কার্যক্রমেঅংশীদার হতেএখন অনেকেইআগ্রহ প্রকাশকরছেন। চীনতারই ধারাবাহিকতায়বাংলাদেশের উন্নয়নেতাদের হাতপ্রসারিত করেছে।বাংলাদেশ ওচীনের মধ্যেবাণিজ্য সম্পর্কএখন বেশজোরালো এবংবাংলাদেশে চীনেরবিনিয়োগের পরিমাণওঅনেক।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টেরসাম্প্রতিক বাংলাদেশসফরের বিষয়েআমার ব্যক্তিগতমতামত হচ্ছে: পদ্মা সেতুকেকেন্দ্র করেএকটা ভুলবোঝাবুঝি থেকেবাংলাদেশ ওবিশ্বব্যাংকের মাঝেদূরত্ব সৃষ্টিহয়। যাবিশ্বব্যাংক পরবর্তীতেবুঝতে পারেএবং এবিষয়ে ইতিমধ্যেতারা অনেকবারদুঃখ প্রকাশকরেছেন। আমিবিশ্বাস করিবিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টেরবাংলাদেশে এইসফরের মধ্যদিয়েপদ্মা সেতুসম্পর্কে ভুলবোঝাবুঝির বিষয়েচূড়ান্ত নিষ্পত্তিহয়ে গেল।জাতির সামনেআজ বিষয়টিপরিষ্কার যে, পদ্মা সেতুনির্মাণের বিষয়েবাংলাদেশ সরকারেরকখনো কোনোসদিচ্ছার অভাবছিল নাঅথবা প্রত্যক্ষবা পরোক্ষভাবেকোনো ধরনেরঅস্বচ্ছতা ছিলনা।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশেরঅন্যতম উন্নয়নসহযোগী। স্বাধীনতারপর থেকেএ পর্যন্তবাংলাদেশের উন্নয়নেবিশ্বব্যাংক ২৩.৯৫বিলিয়ন মার্কিনডলারের সমপরিমাণউন্নয়ন সহায়তাপ্রদান করেছে।এবারও বিশ্বব্যাংকপ্রেসিডেন্ট তারবাংলাদেশ সফরকালেএটুকু আশ্বস্তকরেছেন যে, তারা বাংলাদেশেরউন্নয়নে সত্যিকারভাবেউন্নয়ন সহযোগীহিসেবে কাজকরতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
এখানে একটিবিষয়ে বলাদরকার এবারবিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টবাংলাদেশ সফরেআসার আগেমিডিয়ার মাধ্যমেবিশ্বকে জানালেনযে, ‘আমিবাংলাদেশে একটিবিস্ময়ের বিস্ময়আবিষ্কার করতেযাচ্ছি’।তিনি এলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরসঙ্গে বৈঠককরলেন এবংযাওয়ার সময়বলে গেলেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রগতিসারা বিশ্বেরজন্য অনুকরণীয়’।বাংলাদেশকে অনুসরণকরে অন্যদেরওতাদের অর্থনীতিঢেলে সাজাতেবলেছেন। বিশ্বব্যাংকপ্রেসিডেন্ট আরওবলেন, ‘আমরাওতাদের এইসাফল্যগাথা অনুসরণেকাজ করব।’
বাংলাদেশ প্রতিদিন: চীনের উন্নয়নসহায়তাকে কাজেলাগানোর জন্যপ্রয়োজনীয় সক্ষমতাবাংলাদেশের রয়েছেকি না?
মুস্তফা কামাল: চীনের উন্নয়নসহায়তার দুটিভাগ রয়েছে।একদিকে অবকাঠামোগতউন্নয়নের জন্যসহায়তা অন্যদিকেবাণিজ্য বৃদ্ধিরলক্ষ্যে সহায়তা।এ দুটিক্ষেত্রেই বাংলাদেশতাদের সক্ষমতারপরিচয় ইতিমধ্যেরেখেছে।
বর্তমান সরকারেরআমলে আর্থ-সামাজিকঅবকাঠামোগত উন্নয়নেঅপ্রতিরোধ্য গতিএসেছে। ২০০৯সালে যেখানেবার্ষিক উন্নয়নকর্মসূচির আকারছিল ২২হাজার কোটিটাকা। ২০১৫-১৬-তেএর আকারদাঁড়ায় ৯১হাজার কোটিটাকা আর২০১৬-১৭অর্থবছরে আলোচ্যএডিপির আকারনির্ধারিত হয়েছে।১ লাখ২৩ হাজারকোটি টাকা।প্রতিবছর উন্নয়নবাজেটে সরকারেরবরাদ্দ বেড়েইচলেছে। পাশাপাশিএডিপি বাস্তবায়নহারও আশানুরূপভাবেবাড়ছে। ২০০৯-১০এর আগেযেখানে এহার কখনো৮০ ভাগবাস্তবায়নের মুখদেখেনি, এখনসেটি কোনোবছরেই ৯০ভাগের নিচেনামছে না।২০১৫-২০১৬অর্থবছরে বার্ষিকউন্নয়ন কর্মসূচিরবাস্তবায়নের হারছিল প্রায়৯৩%।
তাই উন্নয়নসহায়তার আলোকেপ্রকল্প ওকার্যক্রম বাস্তবায়নেরসক্ষমতা পুরোপুরিআমাদের রয়েছে।পাশাপাশি ব্যবসাও বাণিজ্যেরক্ষেত্রে আমাদেরসক্ষমতা যথেষ্টবৃদ্ধি পেয়েছে।উদাহরণস্বরূপ বর্তমানসরকার সাতবছর আগেযখন যাত্রাশুরু করেতখন আমাদেররপ্তানি বাণিজ্যেরপরিমাণ ছিল১৪ বিলিয়নডলার। গতবছর রপ্তানিরপরিমাণ দাঁড়ায়৩৪ বিলিয়নডলার যাশুরুর বছরেরচেয়ে দ্বিগুণেরওবেশি। আমরাযে গতিতেএগোচ্ছি তাতে২০২১ সালেআমাদের রপ্তানিবাণিজ্য ৫০-৫৫বিলিয়ন ডলারেরকম হবেনা।
বাংলাদেশ প্রতিদিন: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিঅর্জনে অন্যতমপ্রধান নিয়ামকহচ্ছে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ।যা দীর্ঘদিনধরে কাঙ্ক্ষিতপর্যায়ে নেই।এক্ষেত্রে আপনাদেরসরকার কীপদক্ষেপ নিচ্ছেন?
মুস্তফা কামাল: দেশের ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগকেপ্রয়োজনীয় নীতিগতসহায়তা ওবিনিয়োগবান্ধব পরিবেশনিশ্চিত করারফলশ্রুতিতে উৎপাদনশীলতাও রপ্তানিআয় বৃদ্ধিপেয়েছে। সার্বিকজাতীয় প্রবৃদ্ধিতেশিল্পের অংশীদারিত্ববৃদ্ধি করারলক্ষ্যমাত্রা অর্জনেব্যক্তি খাতেরবিনিয়োগ বৃদ্ধিরজন্য প্রয়োজনীয়নীতি সহায়তাপ্রদান, ক্ষুদ্রও মাঝারিশিল্পে অধিকগুরুত্ব দেওয়াএবং শিল্পখাতে উৎপাদনবৃদ্ধির জন্যসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরদক্ষতা উন্নয়নেরউদ্যোগ নেওয়াহয়েছে; বেসরকারিবিনিয়োগ বৃদ্ধিরজন্য ১০০টিবিশেষ অর্থনৈতিকঅঞ্চল গড়েতোলার মহাপরিকল্পনাসরকার গ্রহণকরেছে। বিশেষঅর্থনৈতিক অঞ্চলবাস্তবায়িত হলেশিল্প খাতেরপ্রবৃদ্ধির পাশাপাশি১ কোটিলোকের কর্মসংস্থানহবে।
আরও একটিবিষয় এখানেবলা যায়, অর্থনীতিতে উচ্চতরপ্রবৃদ্ধির জন্যবিনিয়োগ অবশ্যইপ্রয়োজন। পাশাপাশিমাথাপিছু উৎপাদনশীলতাবৃদ্ধিও প্রয়োজন।সরকার এলক্ষ্যে মানবসম্পদ উন্নয়নেরজন্য নানামুখীউদ্যোগ গ্রহণকরেছে। সাধারণশিক্ষার পাশাপাশিবৃত্তিমূলক/কারগরিশিক্ষা, বিষয়ভিত্তিকগবেষণার ওপরগুরুত্বারোপ করেছে।সাত বছরআগে যেখানেকারিগরি শিক্ষায়শিক্ষিতের হারছিল মাত্র১ ভাগেরমতো এখনতা ১০ভাগে উন্নীতহয়েছে। ২০২১সালে এটাশতকরা ২০ভাগে উন্নীতহবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন: আগামী দিনগুলোতেদেশের উন্নয়নেআপনাদের সরকারেরলক্ষ্য কী?
মুস্তফা কামাল: মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসব সময়আমাদের জন্য, আগামীর জন্যObjective and number based উন্নয়নলক্ষ্যমাত্রা ঠিককরে দেন।এর আগেআমরা ২০২১সালের মধ্যেমধ্যম আয়েরদেশে রূপান্তরেরলক্ষ্যমাত্রা ঠিককরেছিলাম। এখনআমাদের সরকারেরলক্ষ্য হচ্ছে২০৩০ এরমাঝে বাংলাদেশকেএকটি জ্ঞানভিত্তিকদেশে রূপান্তরিতকরা এবং২০৩০ এরমাঝে দেশকেপূর্ণমাত্রায় দারিদ্র্যও ক্ষুধামুক্তকরা যাটেকসই উন্নয়নলক্ষ্যমাত্রার একটিঅংশ। মাননীয়প্রধানমন্ত্রী আমাদেরজন্য এরইমাঝে ২০৪১সালের অভীষ্টলক্ষ্যমাত্রাও ঠিককরে দিয়েছেন।২০৪১ সালেবাংলাদেশ হবেবিশ্বের উন্নতদেশের একটিদেশ। একটিসুখী ওসমৃদ্ধশালী দেশ।
আপনারা জানেনপ্রতিবছর বিশ্বব্যাংকজিডিপির ভিত্তিতেবিশ্বের ৫০টিদেশের একটিঅবস্থান নির্ধারণকরে থাকে।Purchasing Power Parity (PPP) ভিত্তিতেবিশ্বে বর্তমানেবাংলাদেশের অবস্থান৩৩তম এবংজিডিপির আকারহচ্ছে ৬৬০বিলিয়ন মার্কিনডলার। এধারাবাহিকতায় ২০৩০সালে পৃথিবীরঅর্থনীতির আঙিনায়বাংলাদেশের অবস্থানহবে ২৫তমএবং আমাদেরজিডিপির আকারহবে ১.৩ট্রিলিয়ন মার্কিনডলার। ২০৪১সালে আমাদেরজিডিপির আকারহবে ২.৭ট্রিলিয়ন মার্কিনডলার এবংবাংলাদেশ সেসময়বিশ্বের সমৃদ্ধিশালী২০টি দেশেরএকটি দেশ, ইনশাল্লাহ।
বাংলাদেশ প্রতিদিন।http://bit.ly/2eApvGn