চীন–জাপান–ভারত : ভূরাজনীতির কবলে বাংলাদেশের বন্দর
চীনা প্রেসিডেন্টসি চিনপিং সম্প্রতিবাংলাদেশ সফরকরে গেলেন।দেখা গেল, এরপর দেশটিতেঅতিপ্রয়োজনীয় ওআধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিতবন্দর নির্মাণেরপ্রতিযোগিতা আরওতীব্র হয়েছে।এই বন্দরনির্মাণের প্রয়োজনীয়তাখুবই দৃশ্যমান।এটা নির্মিতহলে বাংলাদেশঅনেক বাণিজ্যিকসুবিধা পাবে।কিন্তু তাযেন আরকরা যাচ্ছেনা। কারণ, চীন, জাপানও ভারতএই প্রকল্পেবিনিয়োগ করারজন্য রীতিমতোপ্রতিযোগিতায় নেমেছে।যে এটাকরতে পারবে, সে বাংলাদেশও দক্ষিণএশিয়ায় প্রভাবওবিস্তার করতেপারবে।
চীনা প্রেসিডেন্টেরবাংলাদেশ সফরেরপর চীনঅবকাঠামো নির্মাণে২ হাজার৪০০ কোটিডলার বিনিয়োগেরপ্রতিশ্রুতি দেয়।কিন্তু এতেবন্দরের অবকাঠামোনির্মাণের ব্যাপারেবিস্তারিত কিছুবলা হয়নি, যদিও বেইজিংঅনেক বছরধরেই বাংলাদেশেএকটি গভীরসমুদ্রবন্দর নির্মাণেঅর্থায়ন করারচেষ্টা করছে।কথা হচ্ছে, গত ১০বছর বাংলাদেশগড়ে ৬শতাংশ প্রবৃদ্ধিঅর্জন করেছে।এখন তারআধুনিক বন্দরঅবকাঠামো খুবজরুরি হয়েপড়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশেরবৈদেশিক বাণিজ্যের৯০ শতাংশপরিচালিত হয়চট্টগ্রাম বন্দরেরমাধ্যমে। সবকনটেইনার খালাসহয় এইবন্দরে। এটিমূলত একটিনদীবন্দর। বন্দরটিবঙ্গোপসাগর থেকে১০ কিলোমিটারউজানে কর্ণফুলীনদীতে বানানোহয়েছিল। কিন্তুএই বন্দরেমাত্র ৩০ফুট ড্রাফটের(পানিতে জাহাজেরডুবন্ত অংশ) জাহাজ ঢুকতেপারে। অর্থাৎএখানে বড়জাহাজ ঢুকতেপারে না।ফলে বড়জাহাজ থেকেপণ্য আগেছোট জাহাজেনামাতে হয়, যার জন্যব্যবসায়ীদের প্রচুরটাকা গুনতেহয়।
বন্দরের প্রধানতিনটি টার্মিনালেযে কার্গোবাথ (পণ্যখালাসের জায়গা) রয়েছে, তারঅবস্থা খুবখারাপ। অর্ধেকেরওবেশি বাথ১৯৪০-এরদশকে বানানো।আর বন্দরেতো নিয়মিতইপণ্যজট লেগেযায়। ব্যাপারটাবোঝার জন্যএনওয়াইকে লাইনেরএকটি পরিপত্রেরকথা বলাযায়, যেটাতারা এবছরের জুলাইমাসে ক্রেতাদেরউদ্দেশে জারিকরেছিল। এতেতারা বলেছিল, বন্দরে নজিরবিহীনজট লেগেছে, তাই তাদেরজাহাজগুলো ছয়দিন ধরেসেখানে আটকাপড়ে আছে।তবে স্বাভাবিকভাবে
তাদের তিনদিনও সময়লাগে না।আবার এইসেপ্টেম্বর মাসেরশেষ নাগাদশ্রমিক ধর্মঘটেবন্দর থমকেগিয়েছিল। এতেসেখানে ৪০হাজার কনটেইনারেরস্তূপ জমেযায়, যাএই বন্দরেরধারণক্ষমতার অনেকবেশি।
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশেরতৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, পাট ওচামড়ার চাহিদাবাড়ছে। ফলেআশা করাহচ্ছে, ২০২১সাল নাগাদবাংলাদেশের রপ্তানিরপরিমাণ ৫হাজার কোটিডলার ছাড়িয়েযাবে। একইসঙ্গে দেশটিরআমদানির পরিমাণওবাড়ছে। বিশেষকরে, পেট্রোলিয়ামপণ্য, ভোজ্যতেল, সুতা ওযন্ত্রপাতি আমদানিকরছে বাংলাদেশ।
অন্যদিকে ২০২৩সালের মধ্যেচট্টগ্রাম বন্দরেরবাল্ক থ্রোপুটবেড়ে ৪কোটি ৪০লাখ টনহওয়ার কথা, ২০৪৩ সালেরমধ্যে যাহবে ৭কোটি ৩৩লাখ টন।আর বাল্কসেগমেন্ট বছরে৩ দশমিক৯ শতাংশহারে বেড়ে২০৪৩ সালেরমধ্যে ৫কোটি ৫৫লাখ টনহবে। মূলতসিমেন্টের ক্লিংকারআমদানির চাহিদাহবে এরচালিকাশক্তি। এইক্লিংকার আমদানিরঘটনা থেকেবোঝা যায়, দেশের নির্মাণশিল্পেরভবিষ্যৎ ভালো।
এইচপিসি হামবুর্গপোর্ট কনসাল্টিংগত বছরআরও দুটিকোম্পানির সঙ্গেএক যৌথসমীক্ষা করেছে।তারা ভবিষ্যদ্বাণীকরেছে, ২০২০সালের মধ্যেচট্টগ্রাম বন্দরকে২০ ফুটলম্বা কনটেইনারখালাস করতেহবে ২৯লাখ, যেটা২০৪০ সালেরমধ্যে দাঁড়াবে৫১ লাখ।
কিন্তু এইপ্রবৃদ্ধি সত্ত্বেওবাংলাদেশ বন্দরনির্মাণ করতেগিয়ে গলদঘর্মহচ্ছে। ব্যাপারটাহচ্ছে কী, বাংলাদেশ চীনেরসমুদ্রপথনির্ভর বেল্টএর গুরুত্বপূর্ণঅংশ। কথাছিল, বেইজিংবাংলাদেশের দক্ষিণেসোনাদিয়ায় একটিগভীর সমুদ্রবন্দরনির্মাণ করবে।কিন্তু এবছরের ফেব্রুয়ারিমাসে বাংলাদেশসরকার চায়নাহারবার ইঞ্জিনিয়ারিংকোম্পানির প্রকল্পপ্রস্তাব নাকচকরে দেয়।ধারণা করাহয়, ভারতও মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের প্রচণ্ডরাজনৈতিক চাপেরকারণে সেএ কাজকরতে বাধ্যহয়েছে। ভারতও মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র ভারতমহাসাগরে চীনেরপ্রভাব বৃদ্ধিরব্যাপারে উদ্বিগ্ন।
আবার পায়রাবন্দরও চীনেরকরার কথাছিল। কিন্তুআমরা শেষমেশদেখলাম, এটিকয়েকটি দেশেরযৌথ প্রকল্পেপরিণত হলো, যেখানে ভারতেরবড় ধরনেরবিনিয়োগ রয়েছে।এদিকে জাপানওসম্প্রতি বাংলাদেশেভালোভাবে ঢুকতেপেরেছে। এবছরের শুরুতেমাতারবাড়ীতে শতকেটিডলারের একটিবন্দর ওবিদ্যুৎ প্রকল্পেরজন্য বাংলাদেশও জাপানচুক্তি স্বাক্ষরকরেছে, যেখানেসিংহভাগ অর্থদিচ্ছে জাপানইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনএজেন্সি (জাইকা)।
এই প্রকল্পে৪৬০ কোটিডলার ব্যয়হবে, যারমধ্যে ৩৪০কোটি ডলারদেবে জাপান।এতে দুটি৬০০ মেগাওয়াটেরকয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রও ৬০ফুট ড্রাফটেরজাহাজ ঢোকারমতো একটিবন্দর রয়েছে।জাইকার তথ্যমতে, এই বন্দরে৮০ হাজারডেডওয়েট টনের(জাহাজ সর্বোচ্চযে পরিমাণপণ্য নিয়েনিরাপদে চলতেপারে) জাহাজথেকে পণ্যখালাস করাযাবে।
একই সঙ্গে, হামবুর্গের এইচএইচএলএবলছে, পতেঙ্গাউপকূলে ‘বেটার্মিনাল’ নির্মাণেরসম্ভাব্যতা যাচাইয়েরজন্য চট্টগ্রামবন্দর কর্তৃপক্ষতাদের মনোনীতকরেছে, যেটাচট্টগ্রাম বন্দরেরখুব কাছেই।এটি মূলতকনটেইনারভিত্তিক সেবাদেবে, যেখানে৪৫ ফুটড্রাফটের (পানিতেজাহাজের ডুবন্তঅংশের পরিমাণ) জাহাজ ঢুকতেপারবে। ফলেপ্রথমবারের মতোবড় জাহাজগুলোচট্টগ্রামে ঢুকতেপারবে। এরআংশিক অর্থায়নকরবে এশিয়ানডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।
এই বেটার্মিনাল প্রকল্পহোক বানা হোক, ব্যবসা-বাণিজ্যেরজন্য বাংলাদেশেরএই আধুনিকবন্দর নির্মাণেরপ্রয়োজনীয়তা তোআর ফুরিয়েযাচ্ছে না, সেটা থাকবেই।আবার ভূরাজনৈতিকগুরুত্বের কারণেএটির নির্মাণেরাজনৈতিক বিলম্বহওয়ারও ঝুঁকিরয়েছে।
অনুবাদ: প্রতীকবর্ধন, জেওসিডট কমথেকে নেওয়া।
টারলক মুনি: গ্লোবাল পোর্টেরজ্যেষ্ঠ সম্পাদক।
প্রথম আলো। ২৪ অক্টোবর http://bit.ly/2eAkw8w